মোঃ মেহেবুবুল ইসলাম সৌখিন:
আমি একজন লেখক, একজন উদ্যোক্তা। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে আমি একজন ফ্রিল্যান্সার, একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। ফেসবুকে যারা আমার লেখার সাথে পরিচিত এবং যারা আমাকে অনেক দিন ধরে চেনেন তারা অবশ্যই আমার ডিজাইনগুলোর সাথে পরিচিত। মূলতঃ আমার ফ্রিল্যান্সিং এর হাতেখড়ি ২০২০ সালের লকডাউনের সময়। কিভাবে লকডাউনের এই সময়টা কাটাবো, একথা ভাবতে ভাবতে গ্রাফিক ডিজাইন শেখার ইচ্ছা জাগে। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আর্ট এর প্রতি আমার তীব্র ঝোঁক। পরিবারের সবার পরামর্শ নিয়েই LEDP (লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) এর আওতায় গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সটা করি।
প্রথম প্রথম সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে সবকিছুই সহজ লাগতে শুরু হয়। আমাদের শ্রদ্ধেয় মেন্টর সামিয়া আক্তারের অবদান অনেক বেশী। ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটরের সকল টুলস এর কাজ বুঝতে শুরু করি। আমাদের মেন্টরই আমাদেরকে সর্বপ্রথম ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার, আপওয়ার্কের মতো মার্কেটপ্লেসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এটা ছিল কেবলমাত্র শুরু কিন্তু বহুমাইল পথচলাটা ছিল তখনো বাকি।
বর্তমান যুগে, মিডিয়ার কল্যাণে ফ্রিল্যান্সিং এখন অনেকটাই হটকেক। অনেকেই মনে করেন, একটা কম্পিউটার আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হল, যে কেউ ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন এবং ফলাফল হবে লাখ লাখ ডলারের হাতছানি। বিষয়টা মোটেও তা নয়। একজন ফ্রিল্যান্সার হচ্ছে একজন যোদ্ধা। হাজারো বাঁধা পেরিয়ে, অনেক সাধনার পরে একজন ফ্রিল্যান্সার তৈরি হয়। আমরা শুধু সাফল্যই দেখি, এর পিছনের পরিশ্রমের কাহিনী আমরা জানি না।
যাই হোক, শুরুর দিকে অনেক চেষ্টার পরেও যখন কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না, অনেক হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরি। এরপর, দিন-রাত এক করে দিয়ে নিজের কাজের মার্কেটিং ও পোর্টফোলিও প্রোফাইলটা আপগ্রেড করা শুরু করি। অবশেষে, সোনার হরিণের দেখা পাই। প্রথমে দশ ডলারের একটা অর্ডার পাই ফাইভার থেকে। ঈদের দিনের মতো আনন্দ-উল্লাসে কাজ করা শুরু হয় মনের ভিতরে। বলে রাখা ভালো, ফ্রিল্যান্সিং জগতে দুই নৌকায় একসাথে পা দেওয়া যায় না। যে কোনো একটা মার্কেটপ্লেসে অধিকতর মমনোনিবেশ করা শ্রেয়। এরপরে এক এক করে আরো দশ, বিশ, ত্রিশ ডলারের কাজ পাওয়া শুরু করি। আমার ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন স্কিলটা আমাকে বড্ড সাহায্য করে নতুন বায়ার/ক্লাইন্টদেরকে সন্তুষ্ট করে অর্ডার আনতে।
এরপর টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ও পিন্টারেস্ট এ মার্কেটিং করে আরো বেশ কিছু নতুন ক্লাইন্ট সংগ্রহ করি। একইসাথে ফেসবুকেও সমানতালে মার্কেটিং করে লোকাল বায়ারও খুঁজে পাই। একসময়ে আমি একটা ব্যক্তিমালিকানাধীন ই-কমার্সের হয়ে নিয়মিত কাজ করতে থাকি। তাদের হয়ে লোগো ডিজাইন, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি এডিটিং, ব্রæশিয়ার, ব্যানার, লিফলেট ও বিজনেস-কার্ডের কাজ নিয়মিত করতে থাকি।
পরবর্তীতে আরও একটি অনলাইন পেজের হয়ে টি-শার্ট ডিজাইন করি। টি-শার্টগুলোতে ট্রেন্ড ফলো করায়, ধীরে ধীরে তাদের বিক্রয় বৃদ্ধি পায়। কোর্স চলাকালীন তিন মাসের মধ্যেই আমি সাড়ে তিনশ ডলারের কাছাকাছি উপার্জন করতে সক্ষম হই। এই সফলতার উপহারস্বরূপ, আমি খুব দ্রæতই একটা নিকটতস্থ বিজ্ঞাপনি এজেন্সিতে কাজ পাই।
ইতিমধ্যেই, আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের গ্রাফটাও সমানুপাতিক হারে এগোতে থাকে। বর্তমানে আমি Fiverr ও Upwork এ সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। ফলাফল হিসেবে ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনে অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হতে পেরেছি। আর নতুনদের জন্য আমার পরামর্শ হলো- ধৈর্য, পরিশ্রম, সততা ও চেষ্টার সাথে এই কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেওয়া, সফলতা আসবেই। কোনো কষ্টই বিফলে যায় না। সবশেষে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার মেন্টর ম্যাম সামিয়া হাওলাদারকে।