ডিজি রিপোর্টঃ
অনেক বাধা-বিপত্তি প্রতিকূলতাকে জয় করে অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে চলছেন আজকের নারীরা। এখনকার যুগ নারী শুধু বধূ, মাতা কিংবা কন্যা নয়; পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সমান অংশীদার হয়ে কাজ করছেন। সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনীতি সহ সব ক্ষেত্রেই নারীর অগ্রযাত্রা আজ সমাজে দৃশ্যমান।
দেশের একটি জেলা টাঙ্গাইল, যেখানে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাচ্ছেন ৩৭ জন নারী। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে তারা সফল। দক্ষতার সঙ্গে তারা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্নরকম দৈনন্দিন কাজ করছেন। বাল্যবিয়ে ও যৌতুক ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা নিজ নিজ উপজেলাকে মাদক-দুর্নীতি-জঙ্গিমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছেন।
টাঙ্গাইল জেলায় উপজেলা মোট ১২টি। তার মধ্যে ৭ টি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করছেন ৭ জন নারী। টাঙ্গাইল সদরের রানুয়ারা খাতুন, তিনি ৩৩ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের করেন ২০২১ সালের ৩ মার্চ। বাসাইলের নাহিদা পারভীন ৩০ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা, বর্তমান কর্মস্থলে যোগদান করেন ২০২১ সালের ০৭ নভেম্বর। ভূঞাপুরের ইশরাত জাহান ৩১ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদান করেন ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর। দেলদুয়ারে ফারহানা আলী ৩৩ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের তারিখ ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি। মধুপুরে শামীমা ইয়াসমীন ৩৩ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের তারিখ ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল। সখীপুরে ফারজানা আলম ৩৩ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের তারিখ ২০২২ সালের ৬মার্চ। ঘাটাইলে মুনিয়া চৌধুরী ৩৪ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের তারিখ ২০২২ সালের ৬ মার্চ।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ৬ জন নারী। তারা হলেন সোহানা নাসরিন; অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব); হা-মীম তাবাসসুম প্রভা, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এসএ শাখা); বাবলী শবনম, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আরএম শাখা, এনজিও শাখা, ফরম ও স্টেশনারি শাখা); সিনথিয়া হোসেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আইসিটি শাখা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, ফ্রন্টডেস্ক); সুলতানা রাজিয়া, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ এবং লাইব্রেরি শাখা); সাবরিন আক্তার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা, অভিযোগ ও তথ্য শাখা, প্রবাসী কল্যাণ শাখা)।
পুলিশ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন ৩ জন নারী। তারা হলেন কাজী নুসরাত এদীব লুনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন); মারুফা নাজনীন মহেড়া, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অ্যাডিশনাল এসপি ও পলি দাস, টাঙ্গাইলের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি), দায়িত্ব পালন করছেন ৫ জন নারী। তারা হলেন ঘাটাইলে ফারজানা ইয়াসমিন, সখীপুরে জাকিয়া সুলতানা, গোপালপুরে সাদিয়া ইসলাম সীমা, ধনবাড়ীতে ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা ও বাসাইলে নাহিয়ান নুরেন।
শিক্ষা অফিস, নির্বাচন অফিস, কৃষি অফিসসহ শীর্ষ পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। জেলায় শিক্ষা প্রশাসনে ৯ জন নারী রয়েছেন। তারা হলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম, গোপালপুরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা, দেলদুয়ারে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদ পারভীন, নাগরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমানা আরা বিথী, বাসাইল উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর পদে সেলিনা আকতার, সখীপুরে হেলেনা পারভীন, মধুপুরে খন্দকার জাকিয়া শামছি, দেলদুয়ারে সুরাইয়া ইসয়াসমিন ও ভূঞাপুরে রাজিয়া সুলতানা।
নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ২ জন নারী। তারা হলেন ভূঞাপুরে নাজমা সুলতানা ও মির্জাপুরে শরিফা বেগম। কৃষি দফতরে রয়েছেন ৩ জন নারী। তারা হলেন ঘাটাইলে দিলশাদ জাহান, বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার ও সখীপুরে নিয়ন্তা বর্মণ।
উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন ২ জন নারী। তারা হলেন ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহনাজ সুলতানা এবং বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারলী হামিদ।
জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকা এই নারী কর্মকর্তারা দেশের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে জন্য সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি এবং বাস্তবায়নে কাজ কবছেন। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এবং অসহায় মানুষদের সহায়তায় কাজ করে চরছেন। অনেকেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় কাজের ক্ষেত্রে পুরুষ ইউএনও চেয়ে নারীরা কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। পুরুষ নারী ভেদাভেদ না করে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন নারী কর্মকর্তারা। এখন বাংলাদেশে প্রায় বেশীর ভাগ জায়গায় নারীরা সফলভাবে কাজ যাচ্ছেন। প্রশাসনে, পুলিশে, চিকিৎসায়, শিক্ষায়, সৈনিক ও সীমান্তরক্ষী হিসেবেও নারীরা আছেন। সেক্ষেত্রে বলা যায় ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আসছেন নারীরা। ব্যবসা ক্ষেত্রেও নারী আছেন। অনেক নারী উদ্যোক্তা, যারা সফলভাবে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করছেন। তারা সফল হচ্ছেন, কোনও সন্দেহ নেই। নারীরা এখন মাত্র কয়েকটি সাধারণ পেশায় আছেন, এই কথা এখন আর কেউ বলতে পারবেন না। চ্যালেঞ্জিং পেশা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছেন অসংখ্য অসংখ্য নারী।
এখনও বেশিরভাগ পরিবারের নারীদের পেশা বেছে নিতে অভিভাবকদের অনুমতি লাগে। যেখানে একজন পুরুষের পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনুমতি লাগে না। আবার একজন নারীর ক্ষেত্রে চিন্তা করা হয়, যে নারী আসলে কতটুকু সেই পেশাতে যোগ্য হয়ে উঠবেন। ফলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানও চিন্তা করে, সব ক্ষেত্রে নারী দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে কিনা।
পুলিশে যারা চাকরি করেন, পুলিশে সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও তারা কোন ছাড় পান না। একজন পুরুষ পুলিশ সদস্যকে যে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, যেভাবে পেশায় যোগদান করতে হয়। একই প্রশিক্ষণ একজন নারীও নিয়ে থাকেন।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গণি বলেন, জেলার ১২ টি উপজেলার মধ্যে ৭ টিতে নারী ইউএনও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। তারা পুরুষের সমান সমান কাজ করছেন। তারাও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করছেন সফলভাবে।