ডিজি রিপোর্টঃ
বাংলাদেশের প্রধান ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা হলো ‘চা’। বাংলাদেশের চা শিল্পের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। সিলেটের মালনিছড়া চা বাগান প্রথমবারের মতো ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই সিলেটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে পানির পরেই চায়ের চাহিদা সবথেকে বেশি। সচরাচর অধিকাংশ মানুষ চা পান করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
তবে বর্তমান প্রজন্মের মানুষের কাছে আগ্রহ চায়ের চেয়ে বেশি পানীয় জাতীয় পণ্যের প্রতি। সেজন্যই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষকরা চা নিয়ে গবেষণা করে দেশে প্রথমবারের মতো পানীয় হিসেবে ‘টি-কোলা’ উদ্ভাবন করলেন।
শাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনলজি (এফইটি) বিভাগের অধ্যাপক ও টি-কোলা গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ এ বছরের মার্চ মাসে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিন সদস্যের গবেষণা দলের অন্যরা হলেন, এফইটি বিভাগের এম. ইঞ্জিনিয়ারিং থিসিসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নাবিল নওরোজ বৈশাখ এবং একই বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মো. আল ইমরান জাকারিয়া।
বাংলাদেশ ‘চা প্রদর্শনী-১৮’ তে চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চা থেকে বিভিন ফ্লেভারযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, লোশন, চায়ের আচার প্রভৃতি উৎপাদন করা সম্ভব। ‘চা কোলা’ উৎপাদনের সম্ভাব্যতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা গবেষণা কেন্দ্রে ‘টি-কোলা’ কীভাবে উৎপাদন করা যায় সেটাও দেখছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চা থেকে কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস (টি- কোলা) তৈরি করতে ২০১৯ সাল থেকে টি-কোলা গবেষক দলের প্রধান গবেষণা শুরু করেন। প্রায় তিন বছর গবেষণা শেষে এবছর কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন।
এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। শাবিপ্রবির এ গবেষক আরও বলেন, এ দেশে শিশু-কিশোরদের মধ্যে চায়ের প্রতি কিছুটা অনীহা কাজ করলেও কার্বোনেটেড বেভারেজের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। এছাড়া অনেক মানুষ গরমের দিনে চা থেকেও পানীয়র প্রতি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে এ ড্রিঙ্কসগুলো আমাদের শরীরে তেমন উপকার করে না, অনেক ক্ষেত্রে তা ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তাই এমন একটি কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস (পানীয়) তৈরির পরিকল্পনা করেন যাতে চা এর সব গুণাগুণ বিদ্যমান থাকে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য দরকার ছিল পর্যাপ্ত অর্থায়ন। সেজন্য একটি গবেষণা প্রস্তাব (রিসার্স প্রপোজাল) তৈরি করে ‘সাস্ট রিসার্চ সেন্টার’ এ প্রেরণ করেন। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে তারা কাজ শুরু করেন।
গবেষক নাবিল নওরোজ বলেন, তারা ইতোমধ্যেই গবেষণাটি শেষ করেছেন যাতে একটি মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর এবং আকর্ষণীয় ‘টি কোলা’ প্রস্তুত করতে সক্ষম হন। তারা দুই ধরনের 'বøাক টি' এবং 'গ্রিন টি' উভয় নিয়ে টি-কোলা তৈরি করেন। তিনি বলেন, তাদের তৈরি ড্রিঙ্কসগুলোতে কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস করে চায়ের উপকারী উপাদান পলিফেনল, ক্যাফেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাদ্যগুণ ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে। সেনসরি অ্যানালাইসিস টেস্ট করেও আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছেন।
আরেক গবেষক আল ইমরান জাকারিয়া বলেন, তারা যে ড্রিঙ্কসগুলো তৈরি করেছেন তার মেয়াদ তিনমাস পর্যন্ত থাকবে। তবে এ মেয়াদ আরও বাড়ানো নিয়ে তারা কাজ করছেন। এছাড়াও তারা সুগারের পাশাপাশি এর সমগুণ সম্পন্ন নন-সুগার প্রোডাক্ট ডেভেলপ করে ডায়াবেটিক রোগীরাও টি-কোলা গ্রহণ করতে পারবেন। সার্বিক বিষয় নিয়ে ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, এই টি-কোলা তৈরি করতে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন তার অধিকাংশ বাংলাদেশেই রয়েছে। এতে পণ্যটি তৈরি করতে অন্যান্য বেভারেজের (পানীয়) চেয়ে কম খরচ হবে। তাই এর দামও সীমিত থাকবে। এখন গবেষণাটি পাবলিকেশন এর জন্য কাজ চলছে।
তিনি বলেন, গবেষণা সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে তারা নিজেদের গবেষণাগারে কিছু টেস্ট সম্পন্ন করতে পারেননি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই গবেষণাটি আরো বৃহৎ পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। এতে এ উদ্ভাবনটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করছেন।